shakil
- Mr. Shakil♥ria ১৪-০৫-২০২৪

কলি ছোট গল্প প্রথম পর্ব মৃদু হাওয়া বইছে। আকাশে ভাদ্র মাসের শেষ পূর্ণিমার চাঁদ। একটু আগে বৃষ্টি হলেও এখন কোন মেঘ নেই। মনে হচ্ছে বৃষ্টির কারনে আকাশের গায়ে সকল ধুলো মুছে গেছে। চাদের আলো অনেক উজ্জ্বল। আমি মাওয়া ফেরি ঘাটে বসে আছি, প্রায় রাত ১২ টা বাজে। লঞ্চ ঘাটে কোন লঞ্চ নেই এর জন্য ফেরিঘাটে অপেক্ষা করছি। অনেক স্রোতের কারনে ফেরি কখন আসবে কেউ বলতে পারে না। অবশ্য ঘাট থেকে একটু দূরে বসে আছি। এখান থেকে নদী অনেক ভালো দেখা যায়। এই ঘাট মনেহয় পরিত্যক্ত। মাঝে মাঝে কেউ আসছে আবার নিজ ব্যস্ততায় চলে যাচ্ছে। কেউ আমাকে দেখছে না। আমি নিজেও কাউকে দেখছি না। আমি নদী দেখায় ব্যস্ত। সকল প্রস্তুতি নেয়া। ২০ টাকার বাদাম কেনেছি, আমি বাদাম খাই না তারপরেও কেনেছি। দশটা সিগারেট একটা কোক। কবিতার লাইন মনে ভাবছি।আশ্চর্য বিষয় হলো সকল লাইন অনেক সুন্দর হচ্ছে কিন্ত গুছিয়ে কিছু ভাবতে পারছি না, আর লেখার ইচ্ছা করছে না। ভাবতে ভালো লাগছে। নিজেকে কবি ভাবতে শুরু করেছি বোধহয়। অনেক বড় ধরনের বোকামির পথে আমি তারপরেও ভালো লাগছে। নদীর বুকে জসনা স্নান করে যখন আমার মুখে এসে পড়ছে ভালো লাগছে। আবার যখন অনেক দূরে তাকানোর চেষ্টা করছি দৃষ্টি আমাকে সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছে এইটা তোর সীমা এর বাহিরে যেতে পারবি না। এইটাও ভালো লাগছে। সব ভালো লাগার মাঝে কিছু অসম্পূর্ণতা থাকে। আমার মতে, সকল সুন্দর্য্য দেখতে হয় দুই জন। একে অপরের চোখে বিস্ময় দেখে সুন্দর সুন্দরময় হয়। একজনকে ফোনে ট্রাই করছি কিন্ত বালের নেট নাই। এক মিনিট কথা বলার পর পর ফোন কেটে যাচ্ছে। এর জন্য ফোন বন্ধ অন থাকলে কথা বলার ইচ্ছা জাগতে পারে। এত সুন্দর জায়গায় যে খুদা লাগতে পারে আমার জানা ছিলো না। নাকে ইলিশ মাছ ভাজার গন্ধ আসছে। এই গন্ধ মারাত্মক। যে কোন ব্যক্তিকে তার বসে নিয়ে আসতে পারে। আমার পকেটে ৩৫০ টাকার মত আছে। ভাত খাবো কিনা বুঝতে পারছি না। জীবনের অনেক বড় সিদ্ধান্তের মত মনে হছে। কারন টাকাটা দরকার আমি যাচ্ছি বোনের বাসায়। ছোট একটা ভাগ্নে আছে তার জন্য কিছু কেনা দরকার। ভাগ্নে,ভালোবাসা আর খুদা এই তিনের মধ্য আটকে গেছি। পাচ নাম্বার সিগারেট চলছে, এখনো ফেরির দেখা নাই। আমি যে জায়গাটায় বসে আছি তার বাম পাশে একটা ছোট্ট লাইট জ্বলছে। আমার পর্যন্ত আলো আসতে পারছে না। কিছুটা জায়গা আলোকিত করে ক্লান্ত হয়ে গেছে। সীমাহীন নদীর কাছে সে হয়তবা ক্লান্ত। কিছুক্ষণ মধ্যে একটা মেয়ে এসে লাইটের নিচে বসলো। আমি এখনো লাইটের দিকে তাকানো। আমার চোখে একটু ক্লান্তি সারাদিন জার্নি করার পর নদীর ঠাণ্ডা বাতাসে জর চলে এসেছে। এত রাতে একটা মেয়ে এই জিনিস টা স্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো। মেয়েটা দেখতে সুন্দর হবে। কালো রঙের একটা শাড়ী পড়া এতটুকু বোঝা যাচ্ছে। সে কিছু একটা খাচ্ছে। এইটা ভালো লাগছে। আজ যা দেখছি তার সব কিছুই হয়তবা ভালো লাগছে। মেয়েটা আমাকে অবাক করে আমার দেখেই আসছে। আমি অন্য দিকে তাকানোর চেষ্টা করছি। চারিদিকে অনেক আলো আমি যে কোন দিকে তাকাতে পারি কিন্ত আমি পারছি না। আমার ধারনা মেয়েটা আর এ দিকে আসবে না। একটু পরে কিন্নর কন্ঠ,এত রাইতে এই হানে কি করেন, যদি ভুইতে ধরে। মেয়েটা এমন ভাবে হাসছে আমার ভয় এখন করতে লাগলো। এইটা যদি ভূত হয়। আপনি কি আমারে দেইখা ডারাইছেন,আমি কিন্ত ভূত না। আমার নাম কলি, ফুলের আগার কলি। বাহ মেয়েটা আবার হাসছে, তার হাসিটা এইবার কমল। মেয়েটার কলি নামের সার্থকতা আছে, মেয়েটার শরীর থেকে শিউলি ফুলের গন্ধ আসছে । চাপা শিউলি ফুলের গন্ধ যেমন হয়। মাথা ঝিম ধরে গেলো, ফুলের মাদকতায়। কলি : এইখানকার সক্কলে আমারে চিনে,আমার মত রুপবতীরে আবার না চিনে পারে। কন দেখি আমি সুন্দর না। মেয়েটা আসলেই সুন্দর। ঠোঁটে কালো লিপিস্টিক দেয়া। কপালে কালো টিপ। পরনে কালো শাড়ী। যখন চাদের আলো মেয়েটার সাদা গালে পড়ছে। মনে হচ্ছে সাদা কালো ছবি দেখছি। মেয়েটার বয়স ২০ মত হতে পারে। মেয়েটা আসলেই সুন্দর তবে একটু মলিন। আমি কি বলবো,কিছু বুঝতে পারছি না। আপনি এত রাতে এখানে কি করেন। আপনি কি কাঁঠালবাড়ী ঘাটে যাবেন। কলি এবার বোধহয় আরো জরে হাসলো। কলি : এই এলকা হলো আমার, আর আপনি কন আমি কনে যাবো। আমি এইহানে থাকি। রাইতে হলো আমার ব্যবসা। এহন বুচ্ছেন। তয় আপনি কিন্ত আমারে কইলেন না আমি সুন্দর কি না। আমি বললাম, বোঝার চেষ্টা করছি। আমার কাছে বেশি টাকা নাই। ৩৫০ টাকা আছে আপনি চাইলে ১০০ টাকা রাখতে পারেন। এর বেশি কিছু নাই। মেয়েটা আবার হাসছে, আপনি কি বুঝলেন, আমি কি আপনার কাছে টাকা চাইছি। আসলে পুরুষ মানুষ হলো বজ্জাতের হাড়। মেয়ে মানুষকে শুধু তাদের গোলাম ভাববার পারে। আর কিছু করার ক্ষমতা থাকুক বা না থাকুক। (হাহাহা) আপানারে জিগাইলাম, আমি সুন্দর কি না। আর কিছুতো জিগাই নাই। বেশি কথা ক্যান বলেন। বেশি কথা বললে কিন্ত পানিতে ধাক্কা দিবো। মেয়েটা এইটা বলে হাসছে, আমি বললাম, সরি। কলি- আপনি দেহি আবার ইংরেজি কন। শিক্ষিত নাগর আমার। মেয়েটার হাসিটা ভালো লাগছে। চাদের মুক্তা ঝরা হাসি যাকে বলে। এখন পরিবেশ আরো সুন্দর । চাঁদ আগের চাইতে বেশি উজ্জ্বল। নারী হয়তবা দেবীর প্রতিরুপ। আমি আর কিছু বলছি না, আমি চুপ। কলি- এহানে বৃষ্টি হইলে ঘাটের লোক থাকে না। এর লেইগা ব্যবসা নাই। ভাসা লোক কেউ বসবার চায় না। এর লেইগা আজ রাইতে আমি ফ্রী। প্রতি পূর্ণিমা রাইতে অবশ্য ফ্রী। তাই আপানার কাছে এইলাম গল্প করতে। আজ রাইতে আর ফেরি আইবো না।সব গুলা ডুইবা মরবো। কথা শেষ না হইতেই, হাসি প্রবল হতে থাকলো। আমি বললাম, আপনি কি অনেক কষ্টে আছেন, সব কথার শেষে হাসার চেষ্টা করছেন। কলি -ক্যান কষ্টে থাকমু। আমার হাসি কি সুন্দর না। না হইলে কন হাসি চেঞ্জ করি।তাও যদি ভালা না লাগে চাপ টাপ দিতে পারেন, এইটা ফ্রী আপানার জন্য। (হাহাহা) আপনার শইলের যে অবস্থা, মনে হয় ধরবার আগেই পইড়া যাইবেন। (হাহা) কলি একটার পর একটা কথা বলছে, তার সত্যি বোধহয় কোন কাজ নেই। আমারো ভালো লাগছে। আমি কবে দুঃখ ছুয়ে এসে এখানে বসেছি। মনে পড়ছে না। চাদের আলো ভেসে যাচ্ছি মনে হয়। অনেকক্ষণ সিগারেট খাই না, একটা খাওয়া উচিত। কিন্ত লাইটার কই। এই জিনিসটা সবচেয়ে বেশি হারায়। কলি: থাইক আপনার আর বিড়ি খাওনের কাম নাই। পরে খাইয়েন। আমি যে বিড়ি খাবো সেইটা তুমি বুঝলে কি ভাবে। আমি তো তোমাকে কিছু বলি নাই। কলি : (হাহাহা) এইটা বুঝা যায়। বিড়ি খোরদের চেহাড়া ছবি দেখলে বুঝা যায়। মুহের এমন একটা ভাব করে যে কষা হাগা হইছে কিন্ত জিনিস পড়তাছে না। এই মেয়ে সব বিষয় আমার সাথে মজা নেয়ার চেষ্টা করতাছে। এদানিং মজা পাত্র হতে ভালো লাগছে না। কলি : আপনি কি, গোশা করলেন নাকি। (হাহাহা) আচ্ছা গোশা থাকুক একটা পান খান। বিড়ি খাওয়নের দরকার নাই। মজা পাইবেন। আমার হাতে একটা পান,কিন্ত এইটার মধ্যে শিউলি ফুলের গন্ধ। পানের স্বাদ টা অদ্ভুত। যাইহোক ভালো লাগছে। কলি : আপনারে একটা গল্প শুনাবো, পিরিতের গল্প,শুনবেন। অবশ্য না শুনলেও শুনাবো। আইজ অনেকদিন পর মনের কথা কইবার মনে চায়। আপনার ফেরি আইলে চইলা যাবেন। সমস্যা নাই। আমি বললাম শুনবো... চলবে।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।